নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে বাস্তবায়ন হচ্ছে দুটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প, সাবমেরিন নৌ-ঘাটি, কোষ্টগার্ড ঘাটি, গভীর সমুদ্র বন্দর ও এল.এন.জি টার্মিনাল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭০ শতাংশ স্থানীয় জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একজনকেও নিয়োগ করা হয়নি। বাস্তবায়ন হচ্ছে না স্থানীয়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত বিষয় গুলোও।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসব প্রকল্পে স্থানীয়দের চাকরি, পুর্ণবাসনসহ ১০টি দাবীতে মানববন্ধন করে আমরা মাতারবাড়ির সন্তান নামে একটি সংগঠন। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয় সংগঠনটি।
তাদের দাবী গুলো- ১. যোগ্যতা থাকুক, বা না থাকুক মাতারবাড়ি থেকে অন্তত ৭০ শতাংশ কর্মচারি-কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। ২. লবণ ও মৎস্য চাষীদের শতভাগ পুর্ণবাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৩. বিরোধ নিরসনে উচ্চআদালতে পৃথক বেঞ্চ স্থাপন করে দ্রুত সময়ে ভূমির প্রকৃত মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে। ৪. পদ্মাসেতু ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের মতই ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করতে হবে। কারণ মহেশখালীর জমি কৃষি, মৎস্য লবণ শিল্পে উর্বর। কিন্তু পদ্মাসেতু ও পায়রা বন্দরের অধিকাংশ জমি পরিত্যক্ত, তারপরও ওই জমির ক্ষতিপূরণের মূল্য মহেশখালীর জমি থেকে অনেক বেশি নির্ধারণ করা মহেশখালী বাসির জন্য দুর্ভাগ্যের। তাই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ৫. মাতারবাড়িতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর কার্যালয় মাতারবাড়িতেই করতে হবে। ৬. ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলোর বাইরে যেন মাতারবাড়িতে বাস্তবায়নের জন্য আর কোন প্রকল্প নেওয়া না হয়। ৭. দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি ও স্থানীয় জনগণের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মাতারবাড়িতে ৫০০ শয্যার একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৮. মাতারবাড়ির জনগণকে দ্রুত শিল্পকর্মের উপযোগী করার লক্ষ্যে একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করতে হবে। ৯. মাতারবাড়ি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. মাতারবাড়িতে একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি সরকারি বিশ্বমানের পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত মাতারবাড়ির শিক্ষার্থীরা ‘আমরা মাতারবাড়ির সন্তান’ নামে সংগঠনটি গঠন করে।
মানববন্ধনে ওই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক এনামুল হক সাগর বলেন, তারা সরকার বা উন্নয়ন বিরোধী নয়। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তারা জমি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। কিন্তু সেসব প্রকল্পে স্থানীয়দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত কোন বিষয়ই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, কৃষি, মৎস্য ও লবণ শিল্পের জমি হারিয়ে মাতারবাড়ির মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। দিনমজুরেরা পর্যন্ত বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। অনেক দিনমজুর কর্মসংস্থানের খোঁজে চট্টগ্রামে জাহাজ কাটার কাজে যোগ দিয়েছে। কিন্তু অনভিজ্ঞ হওয়ায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহুর্তে দিনমজুর শ্রমিকদের কর্মউপযোগী করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানবেতর জীবনযাপন থেকে রক্ষা করতে হবে। আর এলাকার শিক্ষিত যুবকদের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে নিয়োগ দিয়ে জমিহারা পরিবার গুলোকে সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে হবে।
মানববন্ধনে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও যুবক অংশ নেয়। এতে আরও বক্তব্য দেন মো. সামুন উদ্দিন শাওন, সাজ্জাদ হোসেন, ফরিদুল আলম প্রমুখ।
…………………………
পাঠকের মতামত: